দলিত জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিতের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, পিটিবিনিউজ.কম
সংবিধানের আলোকে ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোত্র নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব শ্রেণির মানুষের মৌলিক নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করা উচিত। সমাজের অবহেলিত-অনগ্রসর জনগোষ্ঠী দলিত সম্প্রদায়ের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ সব ধরনের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা না হলে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে না। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে বেসরকারি সংস্থা শারি আয়োজিত ‘সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পসমুহে দলিত জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি ও রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। এ সময়ে তাঁরা দলিত জনগোষ্ঠীর সব ধরনের সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

আলোচকদের বক্তব্যের জবাবে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অতিরিক্ত সচিব ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রোগ্রাম) আবু মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, দলিতদের জন্য সরকারের সকল প্রকারের সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ রয়েছে। দলিত জনগোষ্ঠীকে সরকারের এই কাজ সম্পর্কে জানতে হবে এবং এই সুযোগ পেতে যথাস্থানে যেতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থার বাইরে তাদেরকে আর কি কি সুবিধা দেয়া যায়, সরকার তা-ও বিবেচনায় নেবে বলে জানান উচ্চপদস্থ এই সরকারি কর্মকর্তা।

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এইচআরপি’র সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত মতবিনিমিয় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সহসভাপতি আজমল হক হেলাল, পিটিবিনিউজবিডি.কমের প্রধান সম্পাদক আশীষ কুমার দে, কালের কন্ঠর সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্র, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি এবং বাংলাদেশ দলিত পঞ্চায়েত ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার দাস।

বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের মহাসচিব নির্মল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন শারি’র নির্বাহী পরিচালক প্রিয় বালা বিশ্বাস। শারি’র এডভোকেসী কো-অর্ডিনেটর রঞ্জন বকসী নুপুর সঞ্চালনায় লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন পঙ্কজ দাস। অনুষ্ঠানে ্য দলিত জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ সংখ্যক নারী উপস্থিত ছিলেন।

আলোচকরা দলিত জনগোষ্ঠীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং প্রাথমিকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাধীন সকল কর্মসূচিতে তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধিভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি, শিক্ষা বৃত্তি, ভিজিডি/ভিজিএফ কার্ড, শিক্ষা সহায়তা, কর্মসংস্থানে দক্ষতা বিকাশ প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা, নিরাপদ মাতৃত্ব সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, কর্মজীবী নারীর মাতৃত্বকালীন ভাতা ও মায়েদের গর্ভকালীন সেবা দলিত জনগোষ্ঠীর নিরাপদ জীবন যাপনে একদিকে যেমন অপরিহার্য অন্যদিকে উন্নয়নে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। তাঁরা বলেন, সরকার ‘জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে’ অন্যতম জনগোষ্ঠী হিসেবে দলিত জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে। তবে এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। যুগ যুগ ধরে সমাজে দলিতদের প্রতি যে অবহেলা গভীরভাবে প্রোথিত, তাকে উৎখাত করে এ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় আনতে হলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অর্থ বরাদ্দ করলেই হবে না। প্রস্তাবিত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ দলিতদের জন্য সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাদের বাসস্থান, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে, দলিত শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে হবে এবং তাদেরকে বিকল্প পেশায় নিয়ে আসতে হবে। সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের পাশাপাশি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমুহকেও দলিতদের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।
অনুষ্ঠানে লিখিতভাবে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে এক কোটিরও বেশি দলিত সম্প্রদায় রয়েছেন। এর মধ্যে ৫৫ লাখেরও বেশি রয়েছে ঋষি সম্প্রদায়। এছাড়া ৩৫ লাখ চা-শ্রমিক ও ১৬ লাখ হরিজন রয়েছে।