রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রচারনায় সংখ্যালঘু নিরাপত্তার বিষয় থাকতে হবে: মেনন

রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রচারনায় সংখ্যালঘু নিরাপত্তার বিষয় থাকতে হবে: মেনন
November 8, 201822
Share on Facebook Tweet on Twitter
রাজনৈতিক দলগুলোরসংবাদচর্চা রিপোর্ট:

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, প্রত্যেক এলাকার সকল স্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব সে এলাকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়ার। দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি বৈষম্য বিরোধী আইন ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠিত হবে। পাকিস্তান শাসনামল থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলে আসছে, যা অন্বীকার করার কোন উপায় নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এখন আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ ঘটছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে সারাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও সরকার এর কোন দায় না নিয়ে বরং দেশে কোন ঘটনা ঘটে নাই বলে প্রচারনা চালিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারনায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। তিনি বলেন, জামায়াত বিএনপি এদেশে ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশে একটি অশ্বস্তির পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেই ঘটনার অবসান ঘটানো হয়েছে। তবে এখন সমাজের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক ব্যাক্তিরা বিভিন্ন জায়গায় সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মানবাধিকার সংগঠন শারি’র আয়োজনে “জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা” শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় রাশেদ খান মেনন উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
শারি’র নির্বাহী পরিচালক প্রিয় বালা বিশ্বাসের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, মানবাধিকারকর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, মানবাধিকারকর্মী ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের যুগ্ম সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি নির্মল রোজারিও। দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংখ্যালঘু নির্যাতন সংক্রান্ত ধারনাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। অনুষ্ঠানে দিনাজপুর এবং বরিশালে ২০০১ এবং ২০১৪ সালে সংঘটিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের এলাকার থেকে নির্যাতনের শিকার রনজিত কুমার রায়, পুরেন দাস, সংবাদকর্মী কল্যাণ কুমার চন্দ, সংবাদকর্মী আজহারুল আজাদ জুয়েল এবং খালেদা আক্তার হেনা তাদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। বরিশালের উজিরপুরের নির্যাতিত রনজিত কুমার রায় তার বক্তব্য রাখার সময় অঝোরে কেঁদে ফেলেন। এ সময় সমগ্র অনুষ্ঠানস্থলে পিনপতন নিরবতা নেমে আসে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, এখনও পর্যন্ত দেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। এটা নির্বাচনী কাজের সাথে জড়িতদের ব্যর্থতা। সংখ্যালঘুদের হতাশ হলে চলবে না, নিজেদের দাবি আদায়ে নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, আগামী নির্বাচনে কোন সাম্পৃদায়িক ব্যাক্তিকে কেউ মনোনয়ন দিবেন না। কারন ওই সকল সাম্প্রদায়িক ব্যাক্তিরাই সাম্প্রদায়িকতা ছড়ায়। যদি দেয়া হয়, তাহেলে তাকে প্রেিরাধ করার জন্য তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘু নির্যাতিত হলে প্রতিরোধে যা প্রয়োজন সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকায় তখনকার সংখ্যালঘু নির্যাতনের কোন বিচার তারা করেনি। কিন্তু ২০১৪ সালে কি হ’ল। তখনতো স্বাধীনতার স্বপক্ষ দাবিদার শক্তি ক্ষমতায় তারা কেন সেদিনের নির্যাতনের ব্যাপাওে কোন বিচার আজ পর্যন্ত করলা না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে সকল দলের চরিত্রই এক। আর এজন্য আমরা হাল ছেড়ে দেবনা। কারন বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে অবদান রেখেছি। সেই অবদানের বলেই আগামী দিনেও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকব। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য কোন উৎসব নয়, বিপদের বার্তা নিয়ে আসে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে সংখ্যালঘুদেও উপর হামলার বিষয়ে তৎকালীন সরকারের ২৯জন মন্ত্রী সরাসরি জড়িত ছিলেন। এ ব্যাপারে একটি কমিশনও গঠিত হয়েছিল। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারনে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তিনি বলেন, কোন সাম্প্রদায়িক ব্যাক্তিকে কেউ মনোনয়ন দিলে সেই এলাকার সংখ্যালঘুরা তাকে ভোট দিবে না। আর এ ব্যাপারে যদি কোন ঘটনা ঘটে সেই দায় দায়িত্ব ওই দলকেই নেত হবে।