এখন আমি নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি

Sapno
ইভা পাল, প্রকল্প উপ-সমন্বয়কারী, পিজিপিডিবি :: এই স্বপ্নটা নারায়ণগঞ্জ জেলা শহর থেকে কিছুটা দূরের বাসিন্দা শ্যাম বর্ণের মেয়ে শ্যামলী রানীর। জেলা শহর থেকে দূরে বসবাস হলেও একটা সুন্দর- স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবনযাপন করবে আজ এই স্বপ্ন দেখছে এবং দেখার বড় সাহস পায় -জেলার সোনারগাঁ উপজেলার আশ্রাফব্দী গ্রামের মা-বাবার আদরের ছোট সšতান শ্যামলী রানী দাস (২৩বছর)। পিতা সুরেশ চন্দ্র দাস (৬২), সোনারগাঁও উপজেলা চত্ত¡রে পুরানো জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। মা ফুলমতি রানী (৫৮), সংসারের সকল কাজের ফাঁকে কাগজ দিয়ে ফুল (ঝরা) তৈরী করেন। ছয় ভাইবোনের মাঝে বড় ভাই অজয় দাস (৪০) রাজধানী শহরের প্রাণকেন্দ্র গুলিস্থানে অন্যের দোকানে টেইলার্সের কাজ করে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাই ভজন দাস (৩৫) ও সাগর দাস (৩১) সেলুনের কাজ করে, চতুর্থ ভাই টগর দাস (২৮) সোনারগাঁ একটা প্রাইভেট ব্যাংকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাবে কাজ করে।বড় বোন শিলা রানী দাস (৪২) বিয়ে হয়ে গেছে। খুব ইচ্ছে থাকলেও সংসারের টানপোড়াতে তৃতীয় শ্রেণীর পর পড়ালেখা করা সুযোগ হয়নি শ্যামলী রানীর। আলাপকালে -শ্যামলী রানী বলে ওঠে সরকার প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়ার খরচ নেয় না ঠিকেই। কিন্তু স্কুলে গেলে একটা ভালা জামা লাগে, পরীক্ষার ফিস দিতে হয়। তখন বাবা আর বড় ভাইয়ের কামাইয়ে দুইবেলা খাওনের খরচ যুগাইতে কষ্ট হইতো। তাই কোন সময় যে লেখাপড়া ছাইড়া দিছি মনে নাই’’। আজ অভাব নামক শব্দটিকে সংসার থেকে দূর করার জন্য পরিবারের প্রতিটি ব্যক্তি আজ আয়মূলক কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু ভাইদের স্ত্রী- সšতান আর মা-বাবার এই যৌথ পরিবারের আয় যেস বর্তমান দ্রব্য মূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলতেও হিমশিম খেয়ে যায়। একসময় শ্যামলী রানী প্রকাশ করলো মা-বাবা এবং ভাইদের দিনভর পরিশ্রমের কথা চিšতা করে নিজেও সিদ্ধাšত নিলাম আমি সেলাই কাজ শিখবো। আর কিছু না পারি নিজের বিয়ে খরচ বাবদ কিছু টাকা তো জোগাড় করে বাবার হাতে দিতে পারবো।’’ এলাকার সমবয়সী বান্ধবী শিল্পী রানীর কাছ থেকে সেলাই কাজ শেখা এবং সময়ের ফাকেঁ ফাকেঁ শিল্পীর মেশিন দিয়ে অর্ডারি কাজ করা। কিন্তু বছর খানেক আগে শিল্পী রানী বিয়ে হয়ে যাওয়ার পুরোপুরি বেকার শ্যামলী। শারি সংস্থার প্রমোটিং জেন্ডার সেনসেটিভ পঞ্চায়েত প্রকল্পের ছায়া পঞ্চায়েত নেত্রী শ্যামলী রানী। অভাব বা সমস্যা মানুষকে খুব সহজে কথা বলতে শিখায়, নিজের ভিতরের কষ্টটুকুকে অজাšেত অন্যের কাছে প্রকাশ করে। তাই ছায়া পঞ্চায়েত মাসিক সভায় (মিটিং পরিচালনায় ছিলো কমিউনিটি ডেভেলপম্যান্ট কোর্ডিনেটর চুমকী বৈদ্য) স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম এবং জনগনের অধিকার বিষয়ে আলোচনা কালে ছায়া পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে লবি মিটিং এর সিদ্ধাšত হয়। সেই সময়টুকুকে কাজে লাগাতে একটুকু ভুল করেনি শ্যামলী। পরবর্তীতে জুন’১৭ লবি মিটিং ইউনিয়ন (মোগড়াপাড়া) চেয়ারম্যানের কাছে এলাকার চাহিদা উপস্থাপনের পাশাপাশি নিজের সমস্যাটাকে উপস্থাপন করলে উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দ সম্মতি জানান। ইউপি চেয়ারম্যান মো: আরিফ মাসুদ এর প্রতিশ্রুতিতে এবং কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর দুলালী রানী দাস ও প্রি-স্কুল শিক্ষক স্বীকৃতি রানী দাস এর সহযোগীতায় শ্যামলী রানী আজ একটা সেলাই মেশিনের মালিক। শুধু তাই নয় আজ আয়ের একটা পথ সৃষ্টি করেছে। অনুভূতি জানতে চাইলে শ্যামলী রানীর জলে ভরপুর টলমল চোখ দুটো অনেক কিছু বলতে চাইলেও প্রকাশ করতে পারেনি অনেক কিছু। তারপরও কৃতজ্ঞ চিত্তে বলে ওঠে ‘‘আজ আমি শারি অফিসের দিদিদের কারণে সেলাই মেশিনটি পাইছি। কারণ আমরা সংসারে অভাবডারে খুব ভালা করিয়া চিনি, জীবনে অনেক কষ্ট করছি, কিন্তু কোনদিন সাহস হয় নাই পঞ্চায়েত বা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে নিজেদের অভাবের কথা বলি। এখন আমি নিজেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। তাই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো একটা সেলাই প্রশিক্ষণ সেন্টার করবো এবং আমি মাষ্টার হবো।