দলিত ও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বনামে গণনার দাবি

আজ সোমবার রাত ১২টার পর থেকে যে আদমশুমারি ও গৃহগণনা শুরু হবে, তাতে দলিত ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁরা বলেছেন, এই জনগোষ্ঠীগুলো এমনিতেই সুবিধাবঞ্চিত। এসব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ও আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে না পারলে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা সম্ভব হবে না।
গতকাল রোববার সিরডাপ মিলনায়তনে শারি নামে একটি বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত ‘আদমশুমারিতে দলিতদের স্বনামে অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক সংলাপে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ কথা বলেন। তাঁরা বলেন, আদমশুমারিতে দলিত জনগোষ্ঠীকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হওয়া প্রত্যেকের অধিকার। এই অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। তাঁদের অভিযোগ, অতীতের আদমশুমারিতে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ইচ্ছে করে কম দেখানো হয়েছিল। ২০০১ সালের আদমশুমারিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৮০টি পাগার মধ্যে ২৬টিকে অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি।
জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল বারকাত অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আদমশুমারি থেকে কোনো গোষ্ঠী বাদ পড়লে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে না। আদমশুমারিতে দলিত, আদিবাসীসহ সব ধরনের বহিঃস্থ জনগোষ্ঠীকে রাখতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য ষষ্ঠ-পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা আছে। যাদের জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়ার কথা বলছেন, গণনার সময় তাদের রাখবেন না কেন? তিনি জানান, তাঁরা সাতটি উপজেলায় দেখেছেন ২০০১ সালের আদমশুমারিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছিল।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিচারপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, আদমশুমারির গুরুত্ব অনেক। দেশে কতগুলো জনগোষ্ঠী বাস করে, কার কী অবস্থা তা আদমশুমারি থেকে জানা যায়। তাহলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা যাবে। কিন্তু এবার যেভাবে আদমশুমারি করা হচ্ছে, তাতে ওই গুরুত্বটা প্রতিভাত হচ্ছে না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, নাগরিকত্ব পাওয়া প্রত্যেকটি ব্যক্তির অধিকার। রাষ্ট্র এই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করতে পারে না। আমি রাষ্ট্রের গণনায় থাকব না, এর চেয়ে অবমাননাকর, অমর্যাদাকর আর কী হতে পারে? তিনি ছিটমহলে বসবাসকারী ব্যক্তিদের আদমশুমারিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম বলেন, আদমশুমারির সঠিক প্রতিবেদন আইন প্রণেতাদের জন্য জরুরি। কিন্তু এবার যে পদ্ধতিতে আদমশুমারি হচ্ছে, তা সঠিক নয়। এতে অন্য ধর্ম, বর্ণ, আদিবাসীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দলিত ব্যক্তিরা দুর্গম এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকে। গণনাকারীরা সচরাচর তাদের কাছে যায় না।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, অতীতের আদমশুমারিতে সুচতুরভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এবারও এক কোটি দলিত ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Reference