দিনাজপুরের চিরিরবন্দর : ৩০ হিন্দু বাড়িতে আগুন লুটপাট : আহত অর্ধশত

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার উসকানিমূলক মাইকযোগে প্রচারের কারণে গতকাল ২ থেকে আড়াই হাজার লোক সংঘবদ্ধ হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে দুটি গ্রামের ৩০টি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগি্নসংযোগসহ ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সময় আক্রান্ত পরিবারগুলোর নারী-শিশু আতঙ্কিত হয়ে জীবন বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ ঘটনায় অর্ধশত জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদেরকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে চিরিরবন্দর উপজেলা হিন্দু নির্বাহী কর্মকর্তা রশিদুল মান্নাফ কবীরকে ক্লোজ করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল মালেককে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করলেও গ্রামবাসীদের মাঝে দারুণ আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সূত্রের খবরে জানা গেছে, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ৬ নং অমরপুর ইউনিয়নের বলাইবাজার, রাজাপুর, কবিরাজপাড়া হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে জনৈক হামিদা বানু চৌধুরী বলাইবাজারে ২০০৬ সালে বেশক’টি দোকানঘর নির্মাণ করেন। তবে সেই স্থানে প্রাচীনকাল হতে শিবস্থান থাকায় তা বাদ দিয়েই তিনি দোকানঘর নির্মাণ করেন। হামিদা বানু চৌধুরী সেই শিবস্থানে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ৬নং অমরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী জানান, উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি নিষ্পত্তির প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে গিয়েছিল। প্রথমত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্রবার রাতে বৈঠকে বসতে সময় না দিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সময় দেন। দ্বিতীয়, ঘুঘড়াতলী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আল আমীন চিরিরবন্দরসহ আশপাশের উপজেলায় ব্যাপকহারে লিফলেট বিতরণ করেন যে ,” হিন্দুরা মসজিদ নির্মাণে বাধা দিচ্ছে তা প্রতিরোধে মুসলি্লরা এগিয়ে আসুন”। এবং তৃতীয়ত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রশিদুল মান্নাফ কবীর শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলাজুড়ে মাইকযোগে প্রচার করেন,” কতিপয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মসজিদ নির্মাণে বাধা প্রদানে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় শুক্রবার রাত ১২টা হতে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বলাইবাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলো।” এতে করে মানুষের মাঝে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। এ ধরনের মাইকিং করে উপজেলা প্রশাসন সুযোগ সন্ধানী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,পার্বতীপুর উপজেলার যশাই, সৈয়দপুর, সুখদেবপুর, নখৈরসহ আশপাশ উপজেলা বিরামপুর থেকে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে সকাল ৯টা হতে ১০টার মধ্যে বলাইবাজারে সংঘবদ্ধ হয়। সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে রাজাপুর কবিরাজ পাড়ায় হামলা চালায়। হামলাকারীরা জীতেন রায়, তপন রায়, নারায়ণ রায়, সুভাষ চন্দ্র, রতন রায়, যোগেস্বর রায়, যোগেন, রনজিত, দিলীপ রায়, চন্দন, প্রেমহরি, নীরেন্দ্র, চন্দ্র নাথ রায়, মোহনী, ধীরেন্দ্র রায় , বীরেন্দ্র, নেন্দু, সোমরাম রায়, কৃষ্ণপদ রায় এবং ৫ নং আবদুলপুর ইউনিয়নের মাঝাপাড়া গ্রামের প্রকাশ রায়, দেবীচরণ রায় , রায়চরণ রায়, প্রদীপ বানিয়া, ডা. দশরত রায়ের বাড়িতে অগি্নসংযোগ করে। প্রায় দু’ঘণ্টাব্যাপী এ তা-ব চলে। হামলাকারীরা গরু-ছাগল, ধান-চাল, পাট, টাকা, টেলিভিশন লুটপাট করে নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে ডিআইজি বিনয় কৃষ্ণ বালা, পুলিশ সুপার মো. ময়নুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আজিজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. হামিদুল হক ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি থমথমে ছিল।

Reference