দিনাজপুরে : ১২ সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িতে আগুন

জামায়াত-শিবির কর্মীরা সদর উপজেলার রানীগঞ্জ উত্তর মহেশপুর গ্রামের ১২টি হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি ও খড়ের গাদা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এলাকার হিন্দু পরিবারের সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব এলাকায় টহল জোরদার করেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পরে গ্রামের কৃষকরা তখন ঘুমিয়ে ছিল। আগুনের লেলিহান শিখার তাপে গ্রামবাসী জেগে ওঠে।
জীবন রক্ষায় নারী-পুরুষ শিশুসহ পরিবারের সদস্যরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে। গ্রামবাসীর চিৎকার চেঁচামেচিতে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আগুন দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা হচ্ছেন, মানিক বসাক, সুদেব বসাক, নিশীথ বসাক, রচিত বসাক, সুরেশ বসাক, সুবল বসাক, সুুদীব বসাক, মৃণাল বসাক।
অপর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নিশীথ বসাক জানান, চাঁদের আলো আর আগুনের শিখায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন সন্ত্রাসী দেখা যায়। নানান ধরনের হুমকি ও অশ্লীল গালাগাল শুনে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ওরা জামায়াত-শিবিরের লোক। সবার হাতে লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ছিল। তবে কাউকেই চেনা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।
কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল কাদের জিলানী জানান, রাত ১টার দিকে দিনাজপুর থেকে দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। কিন্তু তার আগেই বেশিরভাগ খড়ের গাদা ও বাড়ির চাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
গৌরনদী মন্দিরে হামলার
দায়ে গ্রেফতার ৩
প্রতিনিধি, গৌরনদী (বরিশাল) জানান, গত শুক্রবার রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী (বোরাদী গরঙ্গল) গ্রামে সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তের হামলা, ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪০/৫০ জনকে আসামি করে গৌরনদী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করে।
গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম জানান, গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী (বোরাদী গরঙ্গল) গ্রামে সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তের হামলা, ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মন্দির কমিটির সভাপতি দুলাল চন্দ্র দত্তের পুত্র নবকৃঞ্চ দত্ত বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জনকে আসামি করে গৌরনদী থানায় শনিবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেছে। গতকাল পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার পিংলাকাঠী গ্রামের ঢাকা তিতুমীর কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র মিজান খলিফা (২০) ঢাকার ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন (৩২) ও কাসেমাদ এলাকা থেকে কাসেমাবাদ মাদ্রাসার ছাত্র আমিনুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান এক বিবৃতিতে জানান, পিংলাকাঠী মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জামায়াত শিবিরের কোন পর্যায়ের কোন নেতাকর্মী জড়িত নেই। অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা ঘটনা ঘটিয়ে জামায়াত শিবিরের ওপর দায় চাপাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। অন্যদিকে গতকাল বিকেলে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. সহিদুল আলম ও পুলিশ সুপার একেএম এহসানউল্লাহ, গৌরনদী ইউএনও দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নে গতকালের জামায়াতের হরতালে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা শোভনালী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে একটি বিশাল মিছিল বের করে। মিছিলটি ব্যাংদহা বাজার, জোড়দিয়া, গোবরদাড়ি, ফিংড়ী বাজার ও গাভা হয়ে পুনরায় ব্যাংদহা বাজারে এসে শেষ হয়। বিক্ষুব্ধ মিছিলকারীরা গোবরদাড়ি যুবলীগ অফিস, ব্যাংদহা বঙ্গবন্ধু পাঠাগার, ব্যাংদহা বাজারের উত্তমের হার্ডওয়ারের দোকান, তরুণের ফ্লেক্সি লোডের দোকান, অভিমান্য’র মুদি দোকান, নিমাইয়ের চা’র দোকান, উজ্জলের মুদি দোকান ভাঙচুর করে।
বরিশাল জেলা বার্তা পরিবেশক, জানান, বরিশালের হিজলা উপজেলার আলীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন কালীমন্দিরে শনিবার গভীর রাতে দুষ্কৃতকারীরা অগি্নসংযোগ করেছে। এতে ওই মন্দিরের আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে মন্দিরের প্রতীমা অক্ষত রয়েছে।
মন্দির কমিটির সভাপতি দিপক ঘোষ জানান, তিনি রাত ২টা পর্যন্ত মন্দিরে প্রার্থনা করে ঘুমাতে যান। এরপরে দুষ্কৃৃতকারীরা কেরোসিন ঢেলে মন্দিরে অগি্নসংযোগ করে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিভিয়ে ফেলা হলে মন্দিরের একাংশ ভস্মীভূত হয়। রোববার সকালে হিজলা থানার ওসি শওকত আনোয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

Reference