শ্রদ্ধা জানাই শারি সংস্থাকে আমি ও আমার এলাকার শিশুদের সহযোগী বন্ধু হওয়ার জন্যে

1
ইভা পাল, প্রকল্প উপ-সমন্বয়কারী, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ :: যদি মানুষের চেষ্টা থাকে, তাহলে কোনদিন কোন না কোন ভাবে তা অর্জন করা যায় এই বিশ্বাস রেখেই পথ চলা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার কাবলীগঞ্জের মেয়ে স্বীকৃতি রানী দাসের। বাবা হরি কিশোর দাস (৬০),মাতা লক্ষ্মী রানী (৫৫), বড় ভাই বিমল দাস (৪০) বেসরকারী একটা চাকুরী করে, ছোট ভাই বিপক দাস (২২) লেখাপড়া করছে। বাবার কৃষি কাজ আর বড় ভাইয়ের চাকুরী দিয়ে তিন ভাইবোনকে নিয়ে ভালই কাটছিল সংসার। কিন্তু সমাজ আর সামাজিকতার কারণে ২০০৭ সালেই পাশের গ্রামের (আশ্রাফব্দী) কৃষক চন্দ্র শেখর দাসের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে হলো। লেখাপড়ার স্বাদ মিটাতে পারেনি স্বীকৃতি। তারপরও ছোট ভাইয়ের উৎসাহ আর স্বামীর সহযোগীতার ২০০৯ সালে এসএসসি পাশ করে। সংসারের আর্থিক দুরাবস্থা আর সন্তান ছোট থাকার দরুন আর সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পড়ালেখার স্বাদ না মিটলেও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে বেশ আগ্রহ ছিল তার। মনের ভিতর জন্ম নেয় নতুন ইচ্ছা সংসারের আর্থিক উপার্জনে স্বামীর সহযোগী হওয়া। নিজের ইচ্ছা আর চেষ্টা যখন সক্রিয় হয় তখন সময়ও সহযোগী হয়।
2
২০১৪ সাল, স্বামী আর ভাইদের সহযোগীতায় গ্রামের পঞ্চায়েত নেতা সূর্যকুমার ও গনেশ দাসের সাথে নারায়ণগঞ্জের কাচারীগলি ঋষিপাড়ায় শারি সংস্থার একটা মিটিং এ অংশগ্রহন করেন। যুক্ত হয় বাংলাদেশ দলিত পঞ্চায়েত ফোরামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা হিসাবে। সেই স্রোতধারায় শারি সংস্থার জেন্ডার সেন্সটিভ পঞ্চায়েত প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ। ২০১৬ সালে শারি সংস্থার বিকাশ প্রি-প্রাইমারী সেন্টারের শিক্ষিকা হিসাবে কাজ শুরু। তিন সšতানের জননী আজ স্বীকৃতি রানী শুধু গ্রামের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। পরিবারের সম্মতি আর শারি সংস্থার বিশেষ করে প্রকল্পের কর্মীবৃন্দ চুমকী বৈদ্য ও দুলালী রানী সহযোগীতায় বিগত জুন ২০১৭ সালে মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: আরিফ মাসুদ মহোদয়ের সাথে লবি মিটিং এ অংশগ্রহন করেন। এলাকার সেলাই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বেকার শ্যামলী রানী এবং ঊষা রানী ছায়া পঞ্চায়েত নেত্রীর জন্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের ফলে দু’জনের জন্যই দুটি সেলাই মেশিন সরবরাহ করেন। পাশাপাশি নিজের জন্যও একটা সেলাই মেশিনের আবেদন করে এবং নভেম্বর’১৭ সংগ্রহ করেন। কথা প্রসঙ্গে স্কীকৃতি রানী বলেন আমরা যখন আমাদের কৃষি নির্ভর পরিবারটি সেচের অভাবে আবাদী জমিগুলো অনাবাদি জমি হয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়েছি। ঠিক তখনই শারি সংস্থা সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছে আমার দিকে। আজ কেবল আমি আমার সংসারের বিকল্প আয়ের উৎস হিসাবে শারি সংস্থাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ঠিক তা না, আমি শ্রদ্ধা জানাই আমার এলাকার দরিদ্র পরিবারের শিশুগুলোর জন্য, যাদের পরিবারে মা লেখাপড়া জানে না এবং প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর মতো সামর্থ্যও নেই। আমার স্বপ্ন দুই ছেলে এবং এক কন্যা সšতানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারি। পাশাপাশি সমাজের কল্যানে নিজেকে কাজে লাগাতে পারি। প্রসঙ্গক্রমে স্বীকৃতি রানী বলেন আমি আমার কাজের ফাকেঁ এলাকার অন্যান্য নারীও সেলাই মেশিনে কাজ করে। সমাজে নিজেকে কেবল নারী হিসাবে না, একজন সমাজকর্মী ও একজন পঞ্চায়েত সহায়ক হিসাবে স্বীকৃতি পেতে চাই।
তথ্য সংগ্রহে সহায়তা-দুলালী রানী দাস, কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর