সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা অব্যাহত : গ্রেফতার ৪ শতাধিক নিরাপত্তা জোরদার

জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা দেশের বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। হামলার টার্গেট ছিল বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দির। এইসব প্রতিষ্ঠানে তারা পরিকল্পিতভাবে হামলা, ভাঙচুর, আগুন লাগানোসহ লুটপাট করেছে। তাদের তা-বে কয়েকশ পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এইসব ঘটনায় প্রায় চার শতাধিক হামলাকারীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে এইসব তথ্য জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু (হিন্দু) পরিবারের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ ও লুটপাট করেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিকবার থেকে শুরু করে গত শনিবার পর্যন্ত এই তা-বের খবর পাওয়া গেছে। এইসব ঘটনার পর দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, হামলাকারীরা চট্টগ্রাম শহরে একটি স্থানে, চট্টগ্রাম জেলায় ৩টি স্থানে, কুমিল্লার একটি স্থানে, নোয়াখালীতে ১৬টি স্থানে ও লক্ষ্মীপুরে ২টি এলাকায় সংখ্যালঘু (হিন্দু) সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দিরে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় বহু পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সহযোগিতার হাত বাড়ালেও তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি।
বেগমগঞ্জ থানার ওসি জানান, গত বৃহস্পতিবার বেগমগঞ্জ থানার রাজগঞ্জ এলাকায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সংখালঘু পরিবারের ২০ থেকে ২৫টি বাড়িতে তা-ব চালিয়ে তছনছ করেছে। তাদের তা-বের কবলে পড়েছে ৩টি ছোট ও একটি বড় মন্দির। পুলিশ ঘটনার পর হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ভাঙচুরের তা-বের পর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের রাজগঞ্জে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বর্বরতার আলামত।
সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাটসহ বিভিন্নস্থানে ২৫ থেকে ৩০টি এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ওইসব এলাকায় এখনও জামায়াত-শিবির আতঙ্ক বিরাজ করছে।
খুলনা বিভাগের বাগেরহাটের তিনটি স্থানে জামায়াত-শিবির ও সুযোগ সন্ধানী লুটপাটকারীরা তা-ব চালিয়ে সব কিছু তছনছ করেছে। তাদের তা-ব থেকে মন্দির রেহাই পায়নি। সাতক্ষীরার বাগেরহাট এলাকায় সবচেয়ে বেশি তা-ব চালানো হয়েছে। সেখানে ১শর বেশি স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করা হয়েছে। বারবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওইসব স্থাপনায় হামলা চালানো হচ্ছে। হামলা করে তারা শেষ করে না। পুরো সংখ্যালঘু এলাকায় আগুনে পুড়ে তছনছ করার চেষ্টা করছে। এখন খোলা আকাশের নিচে অসহায় পরিবারগুলোর দিন কাটছে। সাতক্ষীরা ছাড়াও ঝিনাইদাহের ৪টি এলাকায় তা-ব, ভাঙচুর, লুটপাট চালানো হয়েছে। বরিশালে একটি এলাকায় তা-ব চালানোর খবর পাওয়া গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তা-ব চালানোর ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৪শজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা নজরদারি। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে তা-ব ও হামলা চালিয়েছে।

Reference