সংখ্যালঘু নির্যাতন

২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছিল তা এক কলঙ্কিত অধ্যায়। রাজনৈতিক মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সেদিন যে অমানবিক ঘটনা ঘটেছিল, তার বিচার এখনও হয়নি। এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় নানা ঘটনা ঘটছে, এতে সংখ্যালঘুদের আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের রামু-উখিয়ার ঘটনা দেশবাসীর বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই ঘটনায় সংখ্যালঘুদের জীবনে নেমে এসেছে নানা শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা। এক ভীতিকর পরিবেশে তাদের জীবন কাটছে। সরকারের দৃঢ় ও কঠোর পদক্ষেপই পারে তাদের আশ্বস্ত ও নিরুদ্বিগ্ন জীবনে ফিরে যেতে।
পত্র-পত্রিকার পাতা ওল্টালে প্রায়ুই দেশের নানা স্থানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর চোখে পড়ে। এসব খবরের কয়েকটির শিরোনাম এ রকম দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নাটোরে সংখ্যালঘু পাড়ায় হামলা ভাংচুর লুট, কেরানীগঞ্জে মন্দির ভাঙচুর, আতঙ্কে সংখ্যালঘুরা, নিরাপত্তাহীনতায় ৩৫টি সংখ্যালঘু পরিবার, সূত্রাপুরে ছয় মাসে শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবার উচ্ছেদ, পুরান ঢাকায় ভবনসহ জমি ও মন্দির দখল, মঠবাড়িয়ায় নির্যাতিতদের বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হাইকোর্টের নির্দেশ ইত্যাদি। এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে পিরোজপুরের একটি ঘটনা। দৈনিক জনকণ্ঠ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে পিরোজপুরে সংখ্যালঘুর জমি দখলের চেষ্টা, অগ্নিসংযোগ ॥ এলাকায় আতঙ্ক। এ ঘটনায় গৃহবধূসহ তিনজন আহত হয়েছে বলেও রিপোর্টে জানানো হয়েছে। জনকণ্ঠের পিরোজপুর সংবাদদাতার প্রেরিত সংবাদ থেকে জানা যায়, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউয়িনের বালবালা গ্রামের সংখ্যালঘুরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের জবরদখলের শিকার হয়েছেন। এলাকার প্রভাবশালী মানিক ও মিঠু শিকদার ১৯টি হিন্দু পরিবারের জমি জোর করে দখলের চেষ্টা করছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ চেষ্টার পরিণতিতে কাজল রানী নামের এক গৃহবধূ এবং আরও ২ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় জবরদখলের চেষ্টাকারী ও তার দোসররা সংখ্যালঘু পরিবারের লোকদের জীবননাশেরও হুমকি দিচ্ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ একটি দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন কখনই কাম্য হতে পারে না। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উদারমনস্ক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে চায়। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু স্বার্থান্ধ, হীন চরিত্রের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা চালায়। কখনও রাজনৈতিক, আবার কখনও একান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থে এসব হামলা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও জবরদখলের ঘটনা ঘটানো হয়। বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকদের দ্বারা আক্রান্ত হলে তার প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী।
সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত নির্যাতনগুলো বিচ্ছিন্ন হলেও এর সম্মিলিত ফল কিন্তু ভয়ানক উদ্বেগজনক। পিরোজপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামের ঘটনা কিংবা চিরিরবন্দর বা রামু-উখিয়া-সূত্রাপুর-কেরানীগঞ্জের ঘটনার ফল একইÑদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতি, আর তার ফলে দেশের সার্বিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধির পাঁয়তারা। তাই সমস্ত ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যে কোন চক্রকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাতে পরিপূর্ণ আস্থা, আত্মবিশ্বাস আর উদ্বেগহীন পরিবেশে সংখ্যাগরিষ্ঠদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

Reference