২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বর্বরতায় অভিযুক্তদের শাস্তি দিতে হবে

২০০১ সালের নির্বাচনের পর, নজিরবিহীন বর্বরতা চালায় তৎকালীন বিজয়ী গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট। হত্যা, লুণ্ঠন, সম্পত্তি দখল, অগি্নসংযোগ, গণধর্ষণের শিকার হন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনই নির্যাতিত হয়নি। পরাজিত দলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরাও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেই সময় ৩৫৫ জনকে হত্যা করা হয়। সম্পত্তি, বাড়িঘর দখল, অগি্নসংযোগ, লুণ্ঠন, গণধর্ষণের মতো জঘন্যতম অন্তত সাড়ে তিন হাজার অপরাধের ঘটনা ঘটে। বর্বরতার ঘটনাগুলো পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও, কোন বিচার সেই সময় হয়নি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই সময়ের বর্বরতার তদন্ত করার জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি মুহম্মদ শাহাবুদ্দিন কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে, পুলিশ সদর দফতরকে বিভিন্ন জেলায়, ১৬টি মামলা দায়ের করতে নির্দেশনা দেয়। একটি জাতীয় দৈনিকের দেয়া খবর থেকে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে দেয়া নির্দেশনার পর আট মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও, পুলিশ দফতর কোন জেলায় এ নির্দেশনা পাঠায়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্ভাব্য আসামিদের নামও পুলিশকে জানানো হয়। যেসব জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে, সেসব জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলোচ্য জেলাগুলোতে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ে মামলা করার কোন নির্দেশনা গত আট মাসেও যায়নি।
আইজি বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে দায়িত্ব শেষ করেছেন। ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তীতে যে নৃশংস, বর্বরোচিত হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, সম্পত্তি দখল, উচ্ছেদ এবং গণধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।
পুলিশ দফতরের এ গাফিলতিটিও এই একই অপরাধের সমতুল্য। মানবতাবিরোধী এ অপরাধগুলোকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা না করা কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। পুলিশ সদর দফতরের এ দায়িত্বহীনতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। পুলিশের এ অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।
বর্তমান সরকারের সময় আছে আর মাত্র ১ বছর। এই সময়ের মধ্যে মামলা কবে হবে? অপরাধীদের বিচার কবে হবে? আর শাস্তিই বা হবে কবে? তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
পুলিশের এ ধরনের গাফিলতি এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই, এই জঘন্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটে। এ বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, এই বাস্তবতায় আমাদের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রয়েছে।
১. অবিলম্বে নির্দেশিত জেলাগুলোতে মামলা করতে হবে।
২. দ্রুত মামলার কাজ শুরু করতে হবে।
৩. মামলার কাজ নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।
৪. পুলিশ সদর দফতরে যারা ৮ মাসেও মামলা করার নির্দেশগুলো পাঠায়নি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমরা চাই, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি যত দ্রুত সম্ভব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা কার্যকর করা হোক। কোন টালবাহানায় বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা যেন না হয়। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় অপরাধীরা যেন এ সরকারের আমলেই শাস্তি পায়, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

Reference