কিশোরীগঞ্জে বজরাং দলের ভূমিদস্যুরা বেপরোয়া : বাড়িতে আগুন মিথ্যা মামলা ও ভুয়া দলিলে হিন্দুদের জমি আত্মসাৎ

হিন্দুদের জমি ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতে নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের দক্ষিণ বাহাগিলি কাচারী পাড়ায় গড়ে উঠেছে বজরাং দল। ভূমিদস্যু চক্র বজরাং দলের সদস্যরা হিন্দু পরিবারের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করার জন্য চালাচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। পাশাপাশি পুলিশকে ম্যানেজ করে হিন্দুদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করছে ওই চক্র। এমনকি বেশ কিছু হিন্দু পরিবারের ঘরে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় ববিতা রানী নামের এক গৃহবধূ মামলা করেছে থানায়। অথচ আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনব্যাপী ওই গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের শিল্পপতি নুর ইসলাম কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের দক্ষিণ বাহাগিলি কাচারী পাড়ায় পাটকল (জুট মিল) স্থাপনের জন্য জমি ক্রয় করছেন। জমি ক্রয়ে একদল দালাল মাঠে নেমেছে। শিল্পপতি নুর ইসলাম জমি ক্রয়ে দালালদের প্রতি শতাংশ জমির জন্য এক হাজার টাকা করে কমিশন দিচ্ছেন। কমিশনের আশায় ওই এলাকার কিছু দালাল এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জমি বিক্রি করতে চাপ সৃষ্টি করছে। এতে কেউ রাজি না হলে তার জমি ভুয়া দলিলে ক্রয় দেখিয়ে অথবা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করছেন। ওই চক্রটি নিরীহ এসব মানুষের ওপর একের পর এক মামলাও করছে। এদের কয়েকজন মিথ্যে মামলায় হাজতবাস করেছেন বলে অভিযোগ মিলেছে। তাদের দেয়া মামলায় বাদ পড়েনি ৮০ বছরের বৃদ্ধ ধীরেন্দ্র রায়। উত্তর বাহাগিলি গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, এদের জমি গ্রাস করার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এসব মামলায় পুলিশ কোন তদন্ত না করেই গ্রেফতার করছে নিরীহ মানুষদের। তাদের পক্ষে কেউ কথা বললে তার বিরুদ্ধেও সাজানো মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এভাবে তাকেও একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। গ্রামের জ্যোতিভূষণ চন্দ্র রায় (৩৫) বলেন, সৈয়দপুরের নুর ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী তাদের এখানে পাটের কল করার জন্য জমি কিনছেন। তার বাবা ধীরেন্দ্র নাথের ৮৩ শতক জমি রয়েছে। ৭২ সালে কেনা ওই জমি ভুয়া ওয়ারিশদের মাধ্যমে ক্রয় দেখানো হয়েছে। গত ১০ মার্চ নুর ইসলাম ৫০/৬০ জনের একটি লাঠিয়াল বাহিনী পাঠিয়ে জমি দখল করার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় ধীরেন্দ্রনাথ বাদী হয়ে নূর ইসলাম বাহিনীকে বিবাদী করে সহকারী জজ কিশোরীগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে একই উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের নগরবন্দ গ্রামের একাব্বর আলীর ছেলে মিজানুর রহমান ওরফে দুলাল, বজরাং দল নামে একটি বাহিনী গঠন করেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কিশোরীগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার শাহজালাল আর বজরাং দলের প্রধান দুলাল খালাত ভাই। ফলে দুলাল সেখানে মহারাজা বনে গেছে। বজরাং বাহিনীর অন্য সদস্যরা হচ্ছে বাচ্চু মিয়া, মজিদ ডাকাত, এনামুল, আশরাফুল, শহিদুলসহ ৫০/৬০ জন। এরা প্রত্যেকেই ভূমিদস্যু। রাতে ডাকাতি করে। এদের সবার নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। এসব মামলায় কেউ কেউ জেলও খেটেছে। ওই কথিত বজরাং বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না এলাকার মানুষ। এ ব্যাপারে শিল্পপতি নুর ইসলাম জানান, ওই এলাকায় পাটকলের জন্য ১২ একর জমি দরকার।

এর মধ্যে প্রায় ৭ একর জমি ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে। এসব দেখাশোনা করেন ম্যানেজার জাকির হোসেন। তিনি কীভাবে কার কাছ থেকে জমি কিনছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এ নিয়ে ম্যানেজার জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জমি কিনতে কিছু কৌশলের প্রয়োজন হয়। বাধা এলে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি প্রকৃত মালিকদের। আর এলাকায় যাতে জমি কিনতে কোন সমস্যা না হয় এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ইতিপূর্বেই মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়েছি। গ্রামের হিন্দু পরিবারের ওপর জোরজুলুম, বাড়িতে আগুন দেয়ার বিষয় তিনি এড়িয়ে যান। তবে গ্রামের হিন্দু পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে গ্রাম ছাড়া করার বিষয়ে তিনি (জাকির) জানান, ওরা তাদের জমি কিনতে দিচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়ে তারা মামলার পথ বেছে নিয়েছেন। বাহাগিলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহ ওরফে দুলু কোন উৎকোচ নেননি বলে জানান। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ওই এলাকার হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকরা অত্যন্ত নিরীহ। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা তাদের ভয়ভীতি দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন বজরাং বাহিনীর লোকজন সেখানে বেশ কিছু হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে জমির আসল কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলা বা লুট করার চেষ্টা করেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উজ্জ্বল কুমার রায়ের সঙ্গে।

তিনি জানান, তিনি একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকার ওই জমিজমা সংক্রান্ত ঘটনাটি অনেক জটিল। এ নিয়ে অধিকতর তদন্ত করছে পুলিশ।

Reference