সংখ্যালঘুদের ওপর জামায়াত শিবিরের হামলা অব্যাহত : বাগেরহাট বরিশাল গাজীপুরে মন্দিরে ভাঙচুর ঘরবাড়িতে আগুন

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের তা-ব ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘরে ও মন্দিরে হামলা-আগুন অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার রাতে বাগেরহাট ও বরিশালে দুটি মন্দিরে আগুন দেয়া হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করা হয়।
প্রতিনিধি, গাজীপুর জানান, গাজীপুরের কাশিমপুরের একটি স্থানে প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে।
সদর উপজেলার কাশিমপুর নামাবাজার এলাকায় গত শুক্রবার রাতে এক ম-পে স্বরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুর হয় বলে জয়দেবপুর থানার চক্রবর্তী পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন।
কাশিমপুর রাধা গোবিন্দ মন্দির কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নন্দ দুলাল দাস জানান, সম্প্রতি স্বরস্বতী পূজা শেষে প্রতিমাটি ওই ম-পে রেখে দেয়া হয়। রাতে কে বা কারা প্রতিমার মাথা এবং বীণাসহ বাম হাতটি ভেঙে দেয়।
প্রতিনিধি, বাগেরহাট জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আরও একটি সার্বজনীন পূজা মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তির তিনটি ঘরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার গভীর রাতে ওই উপজেলার রামচন্দ্রপুর ও বনগ্রাম ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করেছেন। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, বনগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র বসুর বাড়ির একটি গুদাম ও রান্নাঘর এবং একই ইউনিয়নের বহরবুল গ্রামের তাপস সেনের বসতঘর। বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ রায়, মোরেলগঞ্জ সার্কেল এএসপি শহিদুল হক ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোহর আলী গতকাল সকালে ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করেছেন। এসব সহিংস ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের কাজ হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন একজন ক্ষতিগ্রস্ত। তবে পুলিশ ঘটনাগুলোকে রহস্যজনক জানিয়ে বলেছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা সম্ভব না। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে একই উপজেলার চিংড়েখালী ইউনিয়নের সিংজোড় গ্রামের গোপালপুর সার্বজনীন মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় শুক্রবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মোরেলগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মোরেলগঞ্জ থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন জানান, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, বনগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র বসু চৌধুরীর বাড়ির গুদাম ও রান্নাঘর এবং একই ইউনিয়নের বহরবুলা গ্রামের তাপস সেনের একটি বসতঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে দেড়টার মধ্যে আগুন লাগানোর এসব ঘটনা ঘটেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয় গ্রামবাসী দ্রত আগুন নিভিয়ে ফেলায় বড় কোন ক্ষতি হয়নি। আগুনে মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বনগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র বসু চৌধুরী বলেন, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা রাত সাড়ে ১২টার দিকে বনগ্রাম গ্রামে তার বাড়ির দুটি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। স্থানীয় বিএনপির কতিপয় ব্যক্তি এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। তবে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার মোল্লা নারায়ণ চন্দ্র বসু চৌধুরীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাগুলো রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সুনির্দিষ্টভাবে কোন অভিযোগ করছেন না। পুলিশ ঘটনাগুলো তদন্ত করে প্রকৃত দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
প্রতিনিধি, গৌরনদী জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী (বোরাদী গরঙ্গল) গ্রামে সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে গত শুক্রবার রাতে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে মন্দিরে অগি্নসংযোগ করে। এতে মন্দিরের প্রতিমাটি সম্পূর্ণ ও মন্দির ঘরটি আংশিক ভস্মীভূত হয়।
গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী (বোরাদী গরঙ্গল) গ্রামে সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে গত শুক্রবার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে দুর্বৃত্তরা মন্দিরের ভিতরে অগি্নসংযোগ করে। এতে মন্দিরে থাকা প্রতিমা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় এবং মন্দির ঘরটি আংশিক পুড়ে যায়। মন্দির কমিটির সভাপতি দুলাল চন্দ্র দাস জানান, রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে আসলে মন্দিরে আগুন দেখতে পান এবং চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এসে থানায় ও গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লোকজন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি ও জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গতকাল সকালে সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, বরিশাল সিটি মেয়র অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরন, স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, পৌর মেয়র হারিচুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

Reference