সারাদেশে মন্দির এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার

রাজধানীসহ সারাদেশের বৌদ্ধ মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আবাসিক এলাকার ওপর কড়া গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কক্সবাজারের রামু ও চট্টগ্রামের ঘটনার পরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই পদক্ষেপ নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির টার্গেট নিয়ে একটি মহল সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর করছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার সংবাদকে জানান, সারাদেশে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় বিজিবি টহল মোতায়েন করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, সকাল থেকে রাজধানীর সবুজবাগের মুগদা এলাকার বৌদ্ধ মন্দিরে নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সর্বক্ষণ মন্দির এলাকায় টহল দিচ্ছে। এছাড়াও রাজধানীর মেরুল বাড্ডা ও আশুলিয়াসহ যেসব এলাকায় বৌদ্ধ মন্দির আছে সেখানে নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজারের রামুর পর চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, মিরসরাই, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লাকসামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দির রয়েছে। সেই সবস্থানের মন্দির ও আবাসিক এলাকায় সর্বক্ষণ বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া দরকার বলে স্থানীয়রা জানান।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র জানায়, সরকারের শেষ মুহূর্তে একটি মহল নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টির টার্গেট নিয়ে এই হামলা চালাচ্ছে। ঢাকার বাইরে যেখানে নিরাপদ সেখানে তারা সুযোগ বুঝে হামলা চালায়। এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
বান্দরবানের বাইশারীতে বিজিবির টহল
আমাদের প্রতিনিধি বান্দরবান থেকে জানান,
শান্তি ও সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল দুপুরে এক জরুরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য সংঘাতময় ঘটনা এগানোর লক্ষ্যে বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছে রোববার সকাল থেকেই।
জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ জরুরি মতবিনিময় সভায় পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা,পুলিশ সুপার এম কামরুল আহসান এবং নেতারা জানান, জেলায় যে কোনভাবে অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘাতময় অবস্থা সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শান্তি সমাবেশ করা হবে। উপজেলা সদরে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সুশীল সমাজের নেতাসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শান্তিসমাবেশ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় জানানো হয়, প্রশাসন বান্দরবান জেলায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা অবস্থা বজার রাখতে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে সর্বমহল সজাগ রয়েছে বলেও প্রশাসন থেকে বলা হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক জানান, সমপ্রীতির বান্দরবান জেলায় বৌদ্ধ মন্দিরসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয়গুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিশ্চিত পবিত্রতা রক্ষায় পুলিশ, নিরাপত্তাবাহিনী এবং গ্রাম পুলিশদের সজাগ রাখা হয়েছে বলেও সভায় জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এম আবদুল কুদ্দুছ, বান্দরবান পৌর মেয়র এম জাবেদ রেজা, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য কাজী মজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তনচংগ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কেএসমং, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাচিং প্রু জেরি ও থোয়াইংচ প্রু মাস্টার, দৈনিক সচিত্র মৈত্রী সম্পাদক অধ্যাপক এম ওসমান গণি, সাংবাদিক ফরিদুল আলম সুমন, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আলাউদ্দিন ইমামী ও চেম্বার অফ কমার্সের সহ-সভাপতি লক্ষ্মীপদ দাস।
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও পাশের রামু উপজেলার গর্জনীয়া এবং ইদগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন উপজাতীয় পল্লীতে নাশকতার আশঙ্কায় বিজিবি সদ্যদের টহল জোরদার করা হয়েছে।
গত রোববার ভোররাতে রামু এলাকায় উত্তম কুমার নামের কতিপয় নাস্তিক পবিত্র কোরআন অবমাননার কারণে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সংঘাত এড়াতে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ১৫ বিজিবি সদস্যরা বাইশারীসহ আশপাশ এলাকায় টহল জোরদার করেছে।

Reference