মন্দির, বাড়িঘরে আবার হামলা

পাঁচ জেলায় জামায়াত-শিবির আবারও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়ার জের ধরে বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার রাতেও এ তাণ্ডব চালায় তারা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর এবং কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবির।
ঢাকার বাইরে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
গাজীপুর: সদর উপজেলার কাশিমপুর নামাবাজার এলাকায় কালীমন্দিরের পাশের মণ্ডপে গত শুক্রবার রাতে সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। প্রতিমার মাথা, বীণাসহ বাঁ হাত ভেঙে ফেলা হয়। গতকাল সকালে পূজা করতে গিয়ে পূজারিরা প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় দেখে এলাকাবাসীকে খবর দেন।
কাশিমপুর রাধা গোবিন্দ মন্দির কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নন্দদুলাল দাস জানান, সম্প্রতি সরস্বতী পূজা শেষে প্রতিমাটি ওই মণ্ডপে রাখা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ওই প্রতিমা সেখানে এক বছরের জন্য সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু রাতের আঁধারে কে বা কারা প্রতিমার মাথা, বীণাসহ বাঁ হাত ভেঙে ফেলে এবং শামিয়ানা ছিঁড়ে ফেলে।
তবে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা এই হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন। জয়দেবপুর থানার চক্রবর্তী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গৌরনদী (বরিশাল): গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী (বোরাদী গরঙ্গল) গ্রামে সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে গত শুক্রবার রাতে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে মন্দিরটির আংশিক পুড়ে যায়। গত শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
মন্দির কমিটির সভাপতি দুলাল চন্দ্র দাস জানান, রাতে ঘরের বাইরে গিয়ে তিনি মন্দিরে আগুন দেখতে পান। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লোকজন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
সংখ্যালঘু লোকজন ভয়ে মুখ খুলছে না। তবে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করছেন, জামায়াত-শিবির এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গতকাল সকালে সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সিটি মেয়র শওকত হোসেন, স্থানীয় সাংসদ তালুকদার মো. ইউনুস প্রমুখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পূর্বধলা (নেত্রকোনা): জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকেরা গত শুক্রবার গভীর রাতে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় একটি কালীমন্দিরে আগুন দেন। আগুনে উপজেলা সদরের মঙ্গলবাড়িয়ায় রাজপাড়া কালীমন্দিরের চালের ও কাপড়ের সিলিংয়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়।
মন্দির কমিটির সভাপতি অমর চন্দ্র রায় জানান, মন্দিরে একটি কেরোসিনের বোতল পাওয়া গেছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটি নাশকতামূলক।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
রামগতি (লক্ষ্মীপুর): রামগতি পৌরসভার চরসীতা এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বসতবাড়িতে শুক্রবার গভীর রাতে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় গৃহকর্তা নীতিশ চন্দ্র দাসসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। নীতিশ চন্দ্র দাস জানান, আগুনে তাঁর ঘরটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
গতকাল সকালে ইউএনও আ স ম হাসান আল আমিন এবং রামগতি থানার ওসি মো. ইসমাইল মিঞা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসমাইল মিঞা জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): কসবা উপজেলার খেওড়া বাজারে গত শুক্রবার রাতে ১১টি দোকানে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা আগুন ধরিয়ে দেন। এর মধ্যে চারটি দোকান হিন্দু ব্যবসায়ীদের ও ছয়টি আওয়ামী লীগের সমর্থিত ব্যক্তিদের।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে বাড়িতে যান। রাত ১০টার দিকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে স্থানীয় লোকজনসহ ব্যবসায়ীরা বাজারে ছুটে যান। পরে স্থানীয় লোকদের সহায়তায় কসবার কুটি চৌমুহনী ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
দোকানমালিক ও মেহারী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ফুরকান আহাম্মদ বলেন, ‘দোকানগুলোতে রাতে কেউ থাকতেন না। এটি নিঃসন্দেহে নাশকতামূলক কাজ। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা এ কাজ করতে পারে।’
ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু ব্যবসায়ী যাদব চন্দ্র জানান, আগুন লাগার সময় ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। তাঁদের দোকানের পেছন থেকে কেউ আগুন ধরিয়ে দেয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জালাল সাইফুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Reference