অলিখিত ভাবে হলেও ইউনিয়ন পরিষদ ষ্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যক্রমে ভূমিকা রাখছেন প্রান্তিক নেতারা

Up
ইভা পাল, প্রকল্প উপ-সমন্বয়কারী :: ছোট বেলা থেকেই ন্যায়পরায়নতার আর মানবতার মধ্য দিয়ে বড় বড় হতে হতে আজ ৩৪বছরে পা রেখে কেরাণীগঞ্জ উপজেলার তারানগর ইউনিয়নের ভাওয়াল ঋষিপাড়ার বিবেক চন্দ্র দাস। বাবা শ্রী বিজয় চন্দ্র দাস (৬৫) মাতা মৃত মহারানী দাস। দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবেক চন্দ্র দাস বড়। ছোট ভাই গোপাল চন্দ্র দাস (৩০) ওয়েল্ডিং এর কাজ করে। মা-বাবা অল্প শিক্ষিত হলেও সšতান বিবেক চন্দ্র দাস কে পড়ালেখা শিখাতে কোনরূপ কার্পন্য করেনি। বাড়ির উঠোন থেকেই বের হয়েই ভাওয়াল মনোহরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারী পাশ শেষে আটি ভাওয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে এসএসসি এবং লালমাটিয়া কমার্স কলেজ থেকে ১৯৯৮সালে দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে এইচ এস সি ও ২০০১সালে দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে বি.কম পাশ করেন। মানবিক গুনাবলী আর উদ্যমী মনোভাব দিন দিন বিবেক দাসকে বন্ধুমহল, সমাজ আর কলেজের সকল শিক্ষকদের ভালবাসা আর আšতরিকতাকে আরো বাড়িয়ে দিতে লাগলো। অনুভূতিগুলো যখন থেকে অনুভবে আসতে লাগলো তখন থেকেই নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে ভাল নাম করা কোন প্রতিষ্ঠানে হিসাব বিভাগে চাকরী করবে। জীবনের পিছনের গল্প শুনতে চাইলে স্মৃতির পাতা থেকে বিবেক দাস বলে আমি আজ এক সšতানের জনক হলেও একদিন খেয়ালের বশে বন্ধু বান্ধবদের চক্রে পরে ২০০০সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে বাছাই পর্বে টিকে যাই।অধ্যয়ণরত প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ধরে হঠাৎ একদিন মধ্যদুপুরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লালমাটিয়া কমার্স কলেজে উপস্থিত হয়ে আমার খোঁজ করলে প্রিন্সিপাল স্যার কিছুটা অবাক হন আবার কিছুটা ভীত হন। আমি কোন অন্যায় করেছি কিনা জানতে চাইলে সেনাকর্মকর্তা আমাকে ডাকতে বলেন। অবশেষে সবকিছু জেনে বেশ খুশি হলেন প্রিন্সিপাল স্যার এবং বন্ধুমহল। কিন্তু সে আনন্দটুকু কেবল কলেজের ক্যাম্পাস পর্যন্ত রইল। বাবা কিছুটা রাজি থাকলেও মা একেবারেই না। তাই মা-বাবার বড় সন্তান হিসাবে মায়ের চাওয়াকে মেনে নিতে হয়। কিন্তু সময় যে আরো নিষ্টুরতা করে মা কে নিয়ে যায় না ফেরার দেশে। দিনকে দিন বাবার মানসিক অসুস্থ্যতা শারীরিক অসুস্থ্যতায় আঘাত হানে। মানসিক সুস্থ্যতার জন্য বাবাকে সময় দিতে দিতে ধীরে ধীরে বাবার নতুন জুতা তৈরী (গ্রামেই) ব্যবসার পুরো দায়িত্বকে নিতে হয়েছে। তাই আমার বি.কম পাশের পর আর পড়াশোনা করা হয়নি।

কথা শুনতে শুনতে মনে হলো বিবেক দাসের স্বপ্নগুলো গ্রামের গন্ডিতেই আটকে গেলেও তার চেষ্টার যেন কমতি নেই সমাজের শান্তি শৃংখলা আর উন্নয়নের ক্ষেত্রে। ২০১২ সাল থেকে পরোক্ষ ভাবে শারি সংস্থার বিভিন্ন (র্যা লী, মানবন্ধন আর প্রশিক্ষণ) কার্যক্রমে জড়িত থাকলেও ২০১৫সাল হতে ভাওয়াল জাগরনী দলিত সমাজকল্যান যুব ক্লাবের সভাপতি হিসাবে প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ করে আসছেন। অন্যদিকে বাবা বিজয় চন্দ্র দাসের অসু¯’্যতার কারণে অগ্রাধিকার আর যোগ্যতার ভিত্তিতে গ্রাম পঞ্চায়েত বিবেক দাসকে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটিতে ক্যাশিয়ার হিসাবে দায়িত্ব দেন। পথ চলা শুধু এখানেই না, সমাজ উন্নয়ন মনোভাব দৃষ্টিগোচর হয় তারানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক এবং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার আফছার উদ্দিন।জানা যায় ২০১৬সালে ইউনিয়নের গুইতা, কৃষ্ণনগর, ভাওয়াল পশ্চিমপাড়া এবং আটি ভাওয়াল ঋষিপাড়ার ২০জন পুরুষ নিয়ে অলিখিত কমিটিতে প্রতি তিন মাস পর পর ইউনিয়ন পরিষদে মিটিং এ উপস্থিত থাকেন। কিন্তু জানা যায়নি ইউনিয়নে এই কমিটি কি নামে পরিচিত। রাখা হয় না মিটিং রেজুলেশান। সভার বিষয়ব¯তু এবং কার্যক্রম বিষয়ে বলেন ইউনিয়নে কোন ভাতা বা সরকারী সুবিধা আসলে তা কিভাবে বিতরণ করা যায় তার জন্য উপকারভোগী বাছাই ও বিতরণ। তারই সাথে এলাকার শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেম্বারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। একবছরে ৫কেজি করে ৩বার চাল পেয়েছে ২০টি পরিবার, মন্দিরের সামনে গভীর ডোবা (৩ফুট নিচু) মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে, ৬জন বয়স্ক ভাতা পেয়েছে। এলাকার ছায়া পঞ্চায়েত নেত্রীদের সহযোগীতায় ১০জনের বয়ষ্ক ভাতার এবং ৩জনের প্রতিবন্ধী ভাতার ফর্ম ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেয়া হয়েছে।
জানা যায় পেশাগত কারণে চামড়া ব্যবসায় ব্য¯ত থাকার পরও একইসাথে ইউনিয়ন পরিষদে পথ চলা এলাকার পঞ্চায়েত নেতা গুরু প্রসাদ দাস (৫০) পিতা-মৃত চন্দ্রমোহন দাস। ইউনিয়ন পরিষদে এলাকার কোন নারী নেতৃত্বের অংশগ্রহন না থাকলেও ২০১৬ সাল হতে এলাকার ভাওয়াল মনোহরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যালয় ব্যব¯’াপনা কমিটিতে রয়েছে দলিত নারী মিতা রানী দাস (৩২) স্বামী সুদেব দাস (গাড়ির ব্যবসা)। দুই সšতানের (৩য় শ্রেণীর ছাত্রী মন্দিরা দাস ও শিশু শ্রেণীর ছাত্রী ছোয়া দাস) জননী। নিজের সচেতনতা আর স্বামীর সহযোগীতায় কমিটির সদস্য হলেও সমাজে নারী হিসাবে দায়িত্ব পালনে সম্ভাব্য বাধাঁ-বিপত্তির চিন্তা করে নিয়মিত মিটিং উপস্থিত থাকেন না মিতা রানী। কিš‘ দীর্ঘ সময়ের আলাপচারিতা আর বর্তমান পৃথিবীতে নিজের সমাজের অব¯’ানের কথা চি›তা করে আজ বিবেক চন্দ্র দাস সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে ষ্ট্যার্ন্ডি কমিটির মিটিং রেজুলেশান রাখার প্র¯তাব রাখবে আর মিতা রানী দাস এখন থেকে নিয়মিত বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংএ উপস্থিত থাকবে।
উলেলখ্য যে প্রকল্পের মোট ৫০টি কর্মএলাকার মধ্যে ২৭টি (কেরাণীগঞ্জে ১৩টি এলাকা ৭টি ইউনিয়নে, নারায়ণগঞ্জের ৭টি এলাকা ৪টি ইউনিয়নে এবং ঢাকার ৭টি এলাকা ২টি ইউনিয়নে) এলাকা ১৩টি ইউনিয়নের পরিষদের আওতাধীন রয়েছে। প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় বিগত জুলাই ২০১৬সালে ২৫৮ (পু-১৫৩ না-১০৫) জনের তালিকা স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিলেও অšতভূক্তির তথ্য খুবই নগন্য। কেননা অনেক ইউপিতে এখনও কমিটি গঠন হয়নি। অব্যহত রয়েছে প্রান্তিক নেতৃবৃন্দের ই”ছা আর প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সহযোগীতা। চলতি বছরে লবি মিটিং এর ফলে কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়া, সাভার উপজেলার তেুতলঝরা, সোনারগাঁও উপজেলার মুছাপুর, মোগড়াপাড়া এবং বাড্ডা থানার বেরাইদ উনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মহোদয়গন আশ্বত করেছেন প্রান্তিক নেতৃবৃন্দকে যুক্ত করবেন।

তবে আমরা আজ আশাবাদী কারণ বিবেক চন্দ্র দাস, মিতা রানী, গুরু প্রসাদ দাস’রা তাদের সমাজকে শিক্ষা, সচেতনতা, দারিদ্রতামুক্ত একটা শান্তিপূর্ন বাসভুমি হিসাবে দেখতে চায়। কারণ তারা আজ বুঝতে পারছে ব্যক্তিগত জীবনে নিজেদের ভাল কাজের কিছু চিহ্ন সমাজ ও দেশে রেখে যেতে পারলে তা সন্তানদের জীবনে ভাল থাকার ক্ষেত্রে কিছুটা অবদান রাখবে।