দলিত জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১০:৫৬ শেয়ার মন্তব্য()প্রিন্ট

দলিত জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি
অ- অ অ+

সমাজের অবহেলিত-অনগ্রসর জনগোষ্ঠী দলিত সমপ্রদায়ের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ সকল নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, একটি শ্রেণিকে পিছনে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রকৃত সুফল অসম্ভব। তাই দলিত জনগোষ্ঠীর সব ধরনের সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা শারি আয়োজিত ‘সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পসমূহে দলিত জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি ও রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথি অতিরিক্ত সচিব ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রোগ্রাম) আবু মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, দলিতদের জন্য সরকারের সকল প্রকারের সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ রয়েছে। দলিত জনগোষ্ঠীকে সরকারের এই কাজ সম্পর্কে জানতে হবে। আর সেই সুযোগ পেতে যথাস্থানে যেতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থার বাইরে তাদেরকে আর কি কি সুবিধা দেওয়া যায়, সরকার তাও বিবেচনায় নেবে বলে জানান তিনি।

আলোচকরা দলিত জনগোষ্ঠীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং প্রাথমিকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাধীন সকল কর্মসূচিতে তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্ধ রাখার দাবি জানান। তারা বলেন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি, শিক্ষা বৃত্তি, ভিজিডি/ ভিজিএফ কার্ড, শিক্ষা সহায়তা, কর্মসংস্থানে দক্ষতা বিকাশ প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা, নিরাপদ মাতৃত্ব সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, কর্মজীবী নারীর মাতৃত্বকালীন ভাতা ও মায়েদের গর্ভকালীন সেবা দলিত জনগোষ্ঠীর নিরাপদ জীবনযাপনে একদিকে যেমন অপরিহার্য অন্যদিকে উন্নয়নে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

তারা বলেন, সরকার ‘জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে’ অন্যতম জনগোষ্ঠী হিসেবে দলিত জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে। তবে এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। যুগ যুগ ধরে সমাজে দলিতদের প্রতি যে অবহেলা গভীরভাবে প্রোথিত, তাকে উৎখাত করে এ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় আনতে হলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অর্থ বরাদ্ধ করলেই হবে না। প্রস্তাবিত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ দলিতদের জন্য সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাদের বাসস্থান, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে, দলিত শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে হবে এবং তাদেরকে বিকল্প পেশায় নিয়ে আসতে হবে। সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের পাশাপাশি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহকেও দলিতদের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।

এইচআরপি’র সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত মতবিনিমিয় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের মহাসচিব নির্মল চন্দ্র দাস। সভায় বক্তৃতা করেন শারি’র নির্বাহী পরিচালক প্রিয় বালা বিশ্বাস, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সহ-সভাপতি আজমল হক হেলাল, পিটিবি নিউজবিডি. কমের প্রধান সম্পাদক আশীষ কুমার দে, কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্র, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি, বাংলাদেশ দলিত পঞ্চায়েত ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার দাস। শারি’র এডভোকেসী কো-অর্ডিনেটর রঞ্জন বকসী নুপুর সঞ্চালনায় লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন পঙ্কজ দাস।

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে এক কোটিরও বেশি দলিত সম্প্রদায় রয়েছেন। এর মধ্যে ৫৫ লাখেরও বেশি রয়েছে ঋষি সম্প্রদায়। এছাড়া ৩৫ লাখ চা-শ্রমিক ও ১৬ লাখ হরিজন রয়েছে।