সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দায় এড়াতে পারেন না: শারি ও হিউম্যানিটি ওয়াচ

সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দায় এড়াতে পারেন না: শারি ও হিউম্যানিটি ওয়াচ
January 12, 2014 Mehnaz Kabir Lipu

Share
humanityখুলনা, ১২ জানুয়ারী: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে সারা দেশের ন্যায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায়ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নির্যাতন হয়েছে। নির্বাচনের দিন সকাল ১০টায় প্রথম ওই পাড়ার ওপর হামলা শুরু হয়ে রাত অবধি ৩ দফায় হামলা হয়। এতে এলাকার মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পার্শ্ববর্তী ভৈরব নদী পার হয়ে অপর পাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে ঘটনার ৩দিন পরে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় তারা আবার আস্তে আস্তে এলাকায় ফিরতে শুরু করে।

শুক্রবার মানবাধিকার সংস্থা শারি ও হিউম্যানিটি ওয়াচের একটি প্রতিনিধি দল মালোপাড়া পরিদর্শনশেষে গতকাল শনিবার সকালে খুলনার হোটেল রয়্যালে এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। সংবাদ সম্মেলনে শারি ও হিউম্যানিটি ওয়াচের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শারি’র ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর রঞ্জন বকসী নুপু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হিউম্যানিটি ওয়াচের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। সাংবাদকিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাফুজুর রহমান মুকুল, এ্যাওসেড এর প্রকল্প সমন্বয়কারী পলাশ দাশ এবং হিউম্যানিটি ওয়াচের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম সেলিম।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১০ম জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় ‘শারি’ গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় বর্তমান সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নিশ্চিত করেন যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সমূহকে সম্ভাব্য হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করেছে। কিন্তু সারাদেশব্যাপী সংঘটিত হামলার ঘটনা প্রমাণ করে দেয় যে, সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগও কোনোভাবেই এই হামলার ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। তাদের গাফিলতির কারণেই দুর্বৃত্তদের দ্বারা এ ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
দেশের সকল ধরনের নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত। নির্বাচনকালীন জন-প্রশাসনও নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করতে বাধ্য। একটি স্পর্শকাতর জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে এ ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করেছেন সকল পক্ষ। সেক্ষেত্রে যথাযথ নির্দেশনা দিতে এবং উপযুক্ত নির্দেশনা (যদি থাকে) মনিটরিং ও কার্যকর করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্থ ১০৪টি পরিবারের জন্য সরকার এ পর্যন্ত ২ লক্ষ টাকা, দেড়টন চাল ও ১৩৪টি কম্বল বিতরণ করেছে। ফলে পরিবারপ্রতি গড়ে ১ হাজার ৯ শত ২৩ টাকা, সাড়ে ১৪ কেজি চাল ও ১টি কম্বল পেয়েছে। এ ধরনের সহযোগিতা নিতান্ত অপ্রতুল এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর প্রতি উপহাসের সমতুল্য। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পর্যাপ্ত পুনর্বাসন সহায়তা ছাড়া দ্রুত এ ক্ষত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি।
নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের দায়ীদের বিচারের জন্য অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল গঠনের সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যতোগুলো হামলা হয়েছে তার একটিরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। দ্রুতবিচারে এ ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে তা ভবিষ্যত হামলা থেকে ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষা করবে। আয়োজনকারীরা মনে করেন, এ ধরনের মামলা পরিচালনার জন্য কমপক্ষে জেলা জজের সমমর্যাদাপূর্ণ বিশেষ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার কাজ জরুরীভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। বিজ্ঞপ্তি: