সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চলছে : শিবগঞ্জে মন্দিরে আগুন

দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা অব্যাহত রয়েছে। গতকালও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মন্দিরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা কয়েকটি মূর্তি চুরি করে নিয়ে যায়। গত রোববার রাতে শতাধিক জামায়াত-শিবির সদস্য পটুয়াখালীর বাউফলে এক সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় ও লুটপাট চালায়। এ সময় তারা ওই সংখ্যালঘু পরিবারটিকে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। এছাড়া রোববার রাতে জয়পুরহাটে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌর এলাকার নতুন আলিডাঙ্গা মহল্লার একটি সার্বজনীন পূজাম-পে গতকাল ভোর চারটার দিকে দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে ম-পটি পুড়ে যায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা কয়েকটি মূর্তি চুরি করে নিয়ে যায়।
শিবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রদীপ বড় গড়িয়া জানান, গতকাল ভোর চারটার দিকে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা প্রথমে কয়েকটি মূর্তি চুরি করে পরে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এজেডএম শারজিল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা সঠিক করে বলতে পারেনি পূজাম-প কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মন্দির পোড়ানোর ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা নিন্দা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি।
পটুয়াখালী (বাউফল) : শতাধিক জামায়াত-শিবিরের সদস্য বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের চাঁদকাঠী গ্রামের বিজয় দাসের বাড়িতে গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের সদস্যরা প্রথমে ওই বাড়ির নাড়া-কুটার কুড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে তারা বিজয় দাসের ঘরে ঢুকে ব্যাপক লুটপাট চালানোর পর ঘর আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করে। বর্তমানে বিজয় দাস তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে।
বিজয় দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে ‘সংবাদ’কে জানান, ‘হামলাকালে জামায়াত-শিবিরের সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় ছিল বিধায় গ্রামবাসী তাদের প্রতিহত করতে সাহস পায়নি। আমার বসতঘরটি পুড়ে ফেলার পর আমাকে কোন আইনের আশ্রয় না নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারত চলে যাওয়ার হুমকি দেয়, অন্যথায় আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হবে বলেও জানিয়ে দেয়।’
এ ব্যাপারে বাউফল থানার ওসি বলেন, এ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমি বিজয় দাসের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
জয়পুরহাট : জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রথমদিনের সংহিসতায় জয়পুরহাটে ছয়জন নিহত হওয়ার পর গত রোববার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও হিন্দু সমপ্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার বিকেলে পাঁচবিবি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা সুমন চৌধুরী, আবু তালেব চৌধুরী ও রাতে সদর উপজেলার কড়ই-কাদিপুর গ্রামের শোধন চন্দ্রবর্মন ও সুশান্ত কুমার ব্রর্মনের বাড়ি ভাঙচুর করে অগি্নসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে চারটি বাড়িতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকা। এদিকে হরতালের দ্বিতীয় দিনে কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, জাগরণ মঞ্চ ও ২৫টি দোকান ভাঙচুর করেছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি সার্বজনীন কালী মন্দিরের প্রতীমার মাথা নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। আটাপুর ইউনিয়নের মাঝিনা বাজারে চারটি দোকান ও একটি বাড়ি ভাঙচুর করেছে।
এদিকে জয়পুরহাট ও পাঁচবিবিতে ছয়জন নিহত ও শতাধিক আহতের ঘটনায় জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। জয়পুরহাট সদর থানার এসআই আসাদ বাদী হয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার এবং পাঁচবিবি থানার এসআই জাহিদ বাদী হয়ে ১৩৬ জনের নামে ও সাত থেকে আট হাজার অজ্ঞাতনামা লোকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রোববার রাতেই। এদিকে নিহত চারজনের জানাজার নামাজ কুসুম্বা ইউনিয়নের শালাইপুর স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। জেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

Reference